বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

স্বপ্ন পূরণে আর মাত্র ৭২ ঘন্টার অপেক্ষা

তরফ নিউজ ডেস্ক : প্রমত্তা পদ্মার প্রবল স্রোত ও ঢেউয়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে দেশের মানুষ, বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর স্বপ্নপূরণে বাকি আছে মাত্র আর ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণাধীন দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতুতে বসবে ৪১ নম্বর স্প্যান। এর মধ্য দিয়ে শেষ হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামোর কাজ। দৃশ্যমান হবে মোট ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতু।

জানা যায় যে, মূল নদীর মধ্যে ১৫০ মিটার পর পর মোট ৪২টি পিয়ারের (পিলার) ওপর বসানো শেষ হবে মোট ৪১টি স্প্যান। প্রতিটি পিলারে ৬টি করে মোট ২৫২টি পাইল রয়েছে। তবে নদীর তলদেশে মাটির গঠন ও স্রোতের তীব্রতার কারণে নকশা বদল করে সেতুর মাওয়া প্রান্তে কয়েকটি পিলার স্থাপন করা হয়েছে ৭টি পাইলের ওপর। সব জটিলতা, আলোচনা, সমালোচনা, সমস্যা, অনিশ্চয়তা কাটিয়ে কঠিন কিন্তু সুখকর বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে গেছে পদ্মা সেতু। আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে ১২ মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর সব কাজ শেষ হবে।

প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে। এর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হচ্ছে ইতিহাসের একটি বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ব্রিজটির ওপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে রয়েছে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ১৫০ মিটার দীর্ঘ ৪১টি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু। এটির জন্য প্রয়োজনীয় এবং অধিগ্রহণকৃত মোট জমির পরিমাণ ৯১৮ হেক্টয়ে।

প্রস্তাবিত পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প মাওয়া -জাজিরা পয়েন্ট দিয়ে নির্দিষ্ট পথের মাধ্যমে দেশের কেন্দ্রের সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সরাসরি সংযোগ তৈরি করবে। এই সেতুটি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখবে। প্রকল্পটির ফলে প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের মোট এলাকার ২৯ শতাংশ অঞ্চলজুড়ে ৩ কোটিরও অধিক জনগণ উপকৃত হবে। ফলে প্রকল্পটি দেশের পরিবহন নেটওয়ার্ক এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। সেতুটিতে ভবিষ্যতে রেল, গ্যাস, বৈদ্যুতিক লাইন এবং ফাইবার অপটিক ক্যাবল সম্প্রসারণের ব্যবস্থা রয়েছে। সেতুটি চালু হলে দেশের মোট জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।

সেতুটি তৈরি করছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের আওতাধীন চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি। এতে ব্যয় করা হচ্ছে ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার আদলে ‘পদ্মা সেতুর রঙ হবে সোনালি। তবে রাতে সেতুতে জ্বলবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে লাল ও সবুজ বাতি। পদ্মা নদীর পানির স্তর থেকে ৫০ ফুট উঁচুতে বসানো হয়েছে প্রতিটি স্প্যান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে চীনসহ ১৪টি দেশের প্রায় ২ হাজার ২০০ জন প্রকৌশলী ও চার হাজারের বেশি শ্রমিকের পরিশ্রমে তিল তিল করে গড়ে উঠেছে স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত সেতুর সার্বিক অগ্রগতি সাড়ে ৮২ ভাগ। তবে পদ্মা সেতুর অবকাঠামো পুরোপুরি দৃশ্যমান হতে আর মাত্র একটি স্প্যান বাকি থাকলেও যান চলাচল উপযোগী হতে আরও এক বছর সময় লাগতে পারে। গত ৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুতে সর্বশেষ ৪০তম স্প্যানটি বসানো হয়। স্প্যান বাসানো ছাড়া সেতুর অন্যান্য কাজও এগিয়ে চলেছে। সেতু বিভাগের তথ্যমতে, মূল সেতুর কাজ বাস্তবায়নে অগ্রগতি ৯১ ভাগ, আর্থিক অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ৩৮ ভাগ এবং সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া বাস্তবায়ন শতভাগ এগিয়েছে।

এদিকে পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণকাজ ২০২২ সালে পুরোপুরি শেষ হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। করোনাভাইরাস মহামারি ও বন্যায় কাজ বাধাগ্রস্ত না হলে ২০২১ সালেই শেষ হতো। অর্থমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল সেতু ও নদী শাসন তদারকির পরামর্শক সংস্থার মেয়াদ আরও ৩৪ মাস বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ জন্য সরকারের ৩৪৮ কোটি এক লাখ ৩২ হাজার টাকা খরচ বাড়লেও প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে না। করোনাভাইরাস সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। প্রকল্পটি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়েছি। আমরা আশা করছি এরমধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com